আমের উপকারীতা ও অপকারীতা কোনটা বেশি জেনে নিন বিস্তারিত

আম খেতে কেনা ভালবাসে বলুন? কিন্তু আপনি কি জানেন, এই মজাদার ফলটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নয়, শুধু কখনো কখনো ক্ষতিকরও হতে পারে! তাই না জেনে নিয়ম না মেনে আম খাওয়া উচিত নয়। এই লেখায় আমি আপনাদের জানাবো আমের এমন কিছু উপকারিতা যা শুনলে আপনি সত্যিই অবাক হবেন।

আমের-উপকারীতা-ও-অপকারীতা-কোনটা-বেশি-জেনে-নিন-বিস্তারিত

আবার এর সাথে বলবো সেসব অপকারিতা যা আপনার অজানা ছিলো। কিভাবে ও কতটুকু আম খাওয়া উচিত। আপনার কাছে যদি স্বাস্থ্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে এই তথ্যগুলো আপনার জেনে রাখা দরকার তাহলে দেরি না করে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সুচিপত্রঃ আমের উপকারীতা ও অপকারীতা কোনটা বেশি

আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

আপনি নিশ্চয়ই এই গরমকালে এক প্লেট পাকা আমের স্বাদ নিতে ভুল করেন না তাই না কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই মিষ্টি ফলটার ভেতরে কত ধরনের ভিটামিন এ আর পুষ্টি গুণ লুকিয়ে আছে চলুন আজ আমি আপনাদের সেসব চমকপ্রদ গুনাগুন গুলোর কথা বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দেই। তার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন। 

আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে প্রথমেই আসি ভিটামিনের কাছে কেননা  আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি  যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। সেই সাথে আছে ভিটামিন-এ যা চোখের জন্য খুব উপকারী। চোখে ঝাপসা দেখেন, দূরের লেখা বুঝতে পারেন না তাহলে আমের এই পুষ্টি গুণের মাধ্যমে তা সারিয়ে নিতে পারবেন সহজেই। প্রতিদিন নিয়ম করেই কিছুদিন আম খান তারপরেই বুঝতে পারবেন পার্থক্য। আর এসবের সাথে আছে ভিটামিন ই যা ত্বক আর চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে
এছাড়াও আমি রয়েছে ফাইবার পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার আর কিছুটা ফলিক অ্যাসিড। ফাইবার তো জানেনই পেট পরিষ্কার রাখে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আবার পটাশিয়াম হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে, আর যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য কপার খুব দরকারি।

আম খাওয়ার উপকারিতা

  • প্রতিদিন অন্তত একটি করে আম খেলে আপনার শরীরে শক্তি বাড়বে  
  • ত্বককে করে উজ্জল ও স্বাস্থ্যবান
  • হজম শক্তি বাড়ে, ক্ষিধা বাড়ে, আর শরীর থাকে সতেজ
  • কাঁচা আম গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে সেই সাথে ডায়রিয়া ও পানি শূন্যতা কমায়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আর এ থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সর্দি কাশি থেকে শুরু করে নানান ভাইরাস জনিত অসুখে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।

হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে

অনেকের ধারণা মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেলে গ্যাস্ট্রিক হবে কিন্তু আম ঠিকঠাক খেলে ও পরিমান মত খেলে হজম ভালো হয় এতে আছে এনজাইম যা খাবার ভাঙতে সাহায্য করে ও তাড়াতাড়ি হজমে সহায়তা করে।

ত্বক ও চোখের যত্নে

আপনি যদি আপনার ত্বক ঝলমলেও চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে চান তাহলে নিয়মিত অল্প পরিমাণে আম খেতে পারেন এটি চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে ও সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।

শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

গরমকালের অতিরিক্ত গরমে আমরা সবাই প্রায় একটু কাহিনী হয়ে যায়। আমে থাকে প্রাকৃতিক চিনি যেমন গ্লুকোজ যা শরীরে দ্রুত শক্তির যোগান দেয় যার ফলে তাড়াতাড়ি শক্তি পাওয়া যায়। 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে আমি থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই নিয়মিত পরিমাণ মতো আম খেলে এটি ক্যান্সারের প্রতিরোধে সাহায্য কর ভূমিকা পালন করবে।
তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো যেমন ভালো জিনিসও সীমার মধ্যে থাকলে ভালো তবে, অতিরিক্ত খেলে আবার রক্তে তিনি বেড়ে যেতে পারে তাই যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা একটু পরিমিতভাবে বুঝে শুনে খাবেন। সবমিলিয়ে বলতে হয় আম তখন ই উপকারে আসে যদি আপনি সঠিকভাবে বুঝে এবং পরিমাণ মতো খেতে পারেন। তাই এবার আম খাবেন মন ভরে তবে পরিমাণ মতো। 

পাকা আমের অপকারীতা কি কি

অনেকের ধারণা ফল তো যত খুশি খেতে পারি এখানে অপকারিতার কি আছে কিন্তু এ ধারণাটি পুরোপুরি ভুল। কেননা যে কোন জিনিস যদি বেশি খাওয়া হয় তাহলে সেটা উপকারের চেয়ে অপকারি বেশি করে আমও তার ব্যতিক্রম না, আসলে বিষয়টা এমন যে আম যতই মিষ্টি আর স্বাদের হোক কিছু অপকারিতা অবশ্যই আছে যেগুলো জানা খুব দরকার।

ওজন বৃদ্ধি করে

আমে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। আপনি যদি নিয়মিত বেশি বেশি আম খান বিশেষ করে যদি অন্য মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি আম খান তাহলে ওজন কিন্তু সহজেই বাড়তে পারে, তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের আম খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু বিশেষ বিবেচনা করে চলা দরকার।

ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

যাদের ডায়াবেটিকস আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত আম খাওয়া ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কেননা আমে গ্লুকোজ আর ফ্রুটোস থাকে সেটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে তবে একেবারে বাদ দিতে হবে এমন টাও না। তবে পরিমাণ মতো ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া ভালো। 

হজমে সমস্যা হয়

অনেকেই আছেন যাদের আম খেলে গ্যাস বা পেট ফোলা ফোলা ভাব অনুভব হয় বিশেষ করে যদি খালি পেটে বা রাত্রে আম খান তাহলে এই সমস্যাটা দেখা দেয় অতএব খালি পেটে কিংবা রাত্রে ঘুমানোর আগে আম না খাওয়াই উচিত।

মুখে বা গালে ব্যাথা হতে পারে

অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত আম খেলে কারো কারো মুখে বা গলায় জ্বালাপোড়া করতে পারে এর কারণ হতে পারে ফলের অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত অ্যাসিড জাতীয় জিনিস দিয়ে পাকানো।  

ত্বকে এলার্জি ভাব দেখা দিতে পারে

কিছু কিছু মানুষের শরীর অতিরিক্ত সেনসিটিভ হওয়ার কারণে আম খেলে শরীরের চুলকানি বা রেশ ও এলার্জির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম হলে এই সমস্যার বেশি দেখা দেয়।
আম খাওয়া আসলে খারাপ না কিন্তু পরিমাণের চাইতে বেশি খেলে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই সময় বুঝে শরীর বুঝে ও পরিমান মত আম খেলে আম উপকারী করে।

একটি পাকা আমে কত ক্যালরি থাকে

সাধারণত একটি মাঝারি আকারের পাকা আমে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে তবে ক্যালরি নির্ভর করে আমের আকার ধরন আর কতটা পাকা তার ওপর নিচে একটা ধারণা দেওয়া হল
আমের-উপকারীতা-ও-অপকারীতা-কোনটা-বেশি-জেনে-নিন-বিস্তারিত

আমের পরিমাণ আনুমানিক ক্যালোরি
১০০গ্রাম ৬০-৭০ ক্যালোরি
২০০ গ্রাম ১২০-১৪০ ক্যালোরি
২৫০ গ্রাম ১৫০-১৮০ ক্যালোরি
১টি বড়ো আম প্রায় ২০০ ক্যালোরি
একটি পাকা আমের সাধারণভাবে 150 থেকে 200 ক্যালোরি থাকে যদি বড় সাইজের হয় তাহলে এটা শরীরকে বেশি শক্তি দেয় কিন্তু যদি মাত্রার বেশি খান তাহলে ক্যালরি জমে গিয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে তাই পরিমাণ মতো আম খাওয়া উত্তম।

গরমে ঠান্ডা থাকতে কাচা আমের উপকারিতা 

গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরমে ও গোমোট বাতাসে আর ঘামে সবমিলিয়ে শরীর একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এ সময় যদি সঠিক খাবার না খাওয়া হয় তাহলে হিটস্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশনের মত সমস্যা দেখা দেয় আর কাঁচা আম ঠিক এই সমস্যাগুলোরই সমাধান।

গরমকালে রাস্তায় বের হলেই অনেকের মাথা ঘুরে বমি বমি ভাব আসে। যাকে আমরা বলি হিটস্ট্রোক। কাচা আমে থাকা প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষা করে।

কাঁচা আমি থাকা প্রচুর ইলেকট্রোলাইট আর খনিজ পদার্থ যা ঘামে হারিয়ে যাওয়া লবণ পানি শরীরে ফিরে আনে এর জন্যই গরমকালে কাঁচা আম খাওয়া শরীরের পক্ষে উপকারী। 

গরমে ঠান্ডা থাকতে কাঁচা এক প্রকার চাকরি ওষুধের মত। শুধু সাদেই নয় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে ও সতেজ রাখতে এবং হিটস্ট্রো মুক্ত রাখতে পরিমাণ মতো আম খাওয়ার কোন বিকল্প নেই । তবে এর পাশাপাশি পরিমান মত পানীয় পান করতে হবে। 

আম খাওয়ার সঠিক সময়

আম খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বেলা  ১১ টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে যখন হজম শক্তি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এই সময় আম খেলে আমের প্রাকৃতিক চিনি সহজে হজম হয় এবং শক্তি বৃদ্ধি করে দেয়। খাবারের পরপরই আম খাওয়া ঠিক নয় কারণ এতে হজমের সমস্যা হতে পারে আবার একেবারে খালি পেটেও খাওয়া উচিত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সর্বোত্তম ফল পেতে হলে একটি মাঝারি পরিমাণের আম দুপুর বা বিকেলে হালকা খাবারের ১ঘন্টা পর খান এইভাবে আম খেলে উপকারে আসবে।

উপসংহারঃ  আমের উপকারিতা ও অপকারিতা

আম একটি পুষ্টিকর ও রসালো ফল যা গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর চাঙ্গা ও সতেজ রাখতে দারুন ভূমিকা রাখে এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের সমস্যা এবং হজমের জটিলতা দেখা দিতে পারে তাই উপকার পেতে হলে পরিমাণ সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন, আর প্রাকৃতিক খাবার উপভোগ করুন। আবারো দেখা হবে নতুন কোন তথ্য নিয়ে সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন। আর এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো মতামত জানানো থাকলে যোগাযোগ করুন অথবা মন্তব্য করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;

comment url