গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞান বলছে, পুষ্টিকর খাবার খেলে শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয় এবং সে বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়ে ওঠে। তাই গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি কেননা সুস্থ ও মেধাবী সন্তান জন্মের জন্য এটি প্রধান ধাপ।

গর্ভাবস্থায়-কি-খাবার-খেলে-বাচ্চা-বুদ্ধিমান-হয়

প্রতিটি পিতা-মাতা চান তাদের সন্তান সবার থেকে আলাদা জ্ঞান-বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকুক। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে তা সম্পর্কে অনেকেই ধারণা রাখে না। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় 

পেজ সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় অনেক গর্ভবতী মাইরি এই প্রশ্ন কিন্তু অনেকেরই ধারণা নেই কি কি খাবার খেলে গর্ভের সন্তানের বুদ্ধি ও মেধাতে অনেক এগিয়ে যায়। তবে চলুন গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যায় গর্ভাবস্থায় প্রথমত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে গর্ভাবস্থায় প্রোটিন হচ্ছে শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক গঠনের মূল উপাদান। প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস মাছ, ডাল দুধ ছোলা ও সয়াবিন এগুলো মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে যা পরবর্তীতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর মানসিক বিকাশ ভালো হয়। 

গর্ভবতী মায়েদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খাওয়া। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার যেমন মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন সালমান, টুনা ও সরিষার তেলের রান্না করা ছোট মাছ ওমেগা ৩ এসিডে ভরপুর এই উপাদানটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক গঠনে ভূমিকা রাখে গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত ওমেগা ৩ খেলে শিশুর শেখার ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ে। যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত। 

গর্ভাবস্থায় আয়রন ও ফলিক এসিডের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম কেননা আইরন রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে, যা শিশুর মস্তিষ্কের কষে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে। ফলিক অ্যাসিড শিশুর নিউরাল টিউব ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে যার ভবিষ্যতে শিশুর স্মৃতি ও বুদ্ধির সাথে যুক্ত। আয়রন ও ফলিক এসিড যুক্ত খাবার যেমন লাল শাক, পালং শাক, ডাল, ডিমের কুসুম, কলা এইসব খাবারগুলো শিশুর ভবিষ্যতে বুদ্ধিমত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরী।


গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও খনিজ যুক্ত খাবার গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি পূরণ করে। ভিটামিন ও খনির সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ গাজর, আম, কলা, দুধ ও বাদামে এসব উপাদান পাওয়া যায় আর এসব খাবার শিশুদের বুদ্ধিমত্তা মনোযোগ ও শেখার আগ্রহ বা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া একদম অ্যাভোয়েড করতে হবে এবং প্রকৃতিক খাবার বেছে নিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন প্যাকেটজাতীয় কোলড্রিংস বা বেশি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে এতে কৃত্রিম রাসায়নিক থাকে যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এর চেয়ে ভালো হয় যদি ফলমূল শাক-সবজি দুধ বাদাম ও মাছের মত প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া এতে করে শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও শরীর দুটোই ভালোভাবে গড়ে ওঠে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাদ্য তালিকা

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা সন্তানের ২৫পার্সেন্ট বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, প্রথম চার থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে। তাই গর্ভ অবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাদ্য তালিকা ফলিক এসিড যুক্ত খাবার সবচেয়ে বেশি জরুরী,কেননা গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার যেমনঃ ডাল, শাকসবজি, কলা ডিম বাদাম ও ভিটামিন সম্পুরক ট্যাবলেট এই সময় খেতে হয়। ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকলে শিশুর জন্মগত সমস্যা হতে পারে।

এই সময় শরীরে রক্তের চাহিদা বেড়ে যায় এর জন্য প্রতিদিন আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ান লাগবে। আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন লাল শাক খেজুর ডাল কলিজা ইত্যাদি খেলে রক্তস্বল্পতা কমে, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন দুধ দই পনির শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে গর্ভবতী মায়ের হার ও দাঁত মজবুত করে। এ সময় গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকা জরুরি এর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া লাগবে যেমন কমলা, আমলকি, লেবু, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় এটি আইরন শোষণের সাহায্য করে তাই ভিটামিন সি ও আইরন একসাথে খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।

এ সময় গর্ভবতী মায়ের শরীর হাইড্রেট রাখা খুব প্রয়োজন এর জন্য পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খেতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, ফলের রস, খাওয়া যেতে পারে এতে বমি বমি ভাব কমে ও মায়ের শরীর সুস্থ থাকে। গর্ভবস্থায় প্রথম তিন মাসে অনেক বমি বমি ভাব থাকে তাই বেশি খাবার একসাথে না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে দিনে ৫ থেকে ৬ বার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো এতে পুষ্টির অভাব হয় না আবার অস্বস্তিও কম হয় ও বমি বমি ভাব কমে তারপর ও ওমন হলে পুদিনা পাতা বা আদা খেলে বমি বমি ভাব কমে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তানকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে ফলমূলের গুরুত্ব অপরিসীম এবং ফলমূল নিয়মিত খেতেও হবে। তবে গর্ভবস্থায় কিছু ফল আছে যেগুলো পরিহার করতে হবে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। এগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথমে আসে পেঁপে বিশেষ করে কাঁচা বা আধাপাকা পেঁপে গর্ব অবস্থায় একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত এতে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান আছে যা জরায়ুর সংকোচ ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কাঁচা পেঁপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর যদি খুব বেশি খাওয়া হয় তাহলে তা গর্ভের শিশুর জন্য হুমকি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে আনারস খাওয়া ঠিক নয়। কেননা আনারসে থাকি ব্রমেলিন নামক এক ধরনের এনজাইম যা জরায়ুর গঠন নরম করে দিতে পারে। এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে। যদিও অনেকে বলে পরিমিত আনারস ক্ষতি করে না তবে নিরাপত্তার দিক থেকে চিন্তা করে গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়াই ভালো। বেশি পাকা কলা খাওয়া থেকে গর্ভবতী মায়েদের বিরত রাখতে হবে। যদিও কলা পুষ্টিকর একটি ফল কিন্তু যদি কারো ডায়াবেটিকস বা গ্লুকোজের সমস্যা থাকে তাহলে এটি বিপদজনক হতে পারে। পাকা কলায় চিনি ও কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি থাকে যা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিকস তৈরি করতে পারে তাই যাদের এ ধরনের ঝুঁকি আছে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।


গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া ঠিক নয় যদিও আঙুরে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তারপরেও এটি বেশি খেলে শরীর গরম হয়ে যেতে পারে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বিশেষ করে গা গরম মাথা ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে আঙ্গুর ফল এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে তাই গর্ব অবস্থায় আঙ্গুর ফল এড়িয়ে চলাই উচিত। গর্ভাবস্থায় অনেকে বাজার থেকে ফল কিনে খান যা ঠিক নয় কেননা সংরক্ষিত ও রাসায়নিক যুক্ত ফল অনেক সময় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে পাকানো হয় যা গর্ভবতী নারীর জন্য খুব বিপজ্জনক যেমন কার্বাইড পাকানো আম বা কলা শিশুর জন্য বিষের মত রাসায়নিক যুক্ত ফল শিশুর মস্তিষ্ক ও শারীরিক গঠনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে তাই সবসময় অর্গানিক বা নিজের হাতে ধুয়ে সেই ফল খাওয়া উচিত।

গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার উপায় কী

গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার পূর্ব শর্ত হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার থাকা উচিত যেমন দুধ ডিম মাছ মাংস শাকসবজি ফলমূল ও দানা জাতীয় খাবার এতে ভিটামিন প্রোটিন আয়রন ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শিশুর শরীর গঠনে সাহায্য করে অতিরিক্ত চিনি লবণ বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মাকে দিনে অন্তত ৮থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে এতে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং গর্ভের শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। এক্ষেত্রে ডাবের পানি ফলের রস ও ভেজানোর চিড়া বা সুপ খাওয়া উপকারী। পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে যা গর্ভের শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।

গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের মানসিক চাপ শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তাই সবসময় নিজেকে শান্ত রাখুন আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন যা মায়ের মানসিক শান্তি ও শিশুর মস্তিষ্ক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। প্রসবের সময় ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী নির্দিষ্ট সময় পরপর আলট্রাসনো ও রক্তের টেস্ট করানো উচিত এতে শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে আগে থেকে জানা যায় এবং যে কোন সমস্যা হবার আগে থেকেই চিহ্নিত করে তা সমাধান করা সম্ভব হয়।

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে কোনভাবেই ভারী কাজ করা যাবে না তবে হালকা হাটাহাটি বা ডাক্তার অনুমোদিত হালকা ব্যয়াম করা যাবে এক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম করলে শরীর সচল রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এতে গর্ভের শিশু বেশি পুষ্টি পায় এবং গর্ভকালীন শারীরিক সমস্যা কমে যায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। 

গর্ভাবস্থায় প্রোটিনযুক্ত খাবার কেন প্রয়োজন

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রোটিন যুক্ত খাবার খুবই প্রয়োজন কেননা গর্ভঅবস্থায় একজন নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে পুষ্টির চাহিদা অনেক বেড়ে যায় এ সময় মায়ের শরীরে শুধু নিজের প্রয়োজন নয় সাথে গর্ভের শিশুর প্রয়োজনও পূরণ করতে হয় প্রোটিন এমন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মায়ের শরীর গঠন এবং শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে প্রোটিন মাংসপেশী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং শরীরের কোষ গঠনে মুখ্য ভূমিকা রাখে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রটিনযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী প্রোটিন গর্ভ অবস্থায় শিশুর টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মা দূর্বলতা ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা অনুভব করেন প্রোটিন এই লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে তাই ডিম মুরগি মাছ ডাল দুধ ও দই এর মত প্রোটিন বৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত
গর্ভাবস্থায়-কি-খাবার-খেলে-বাচ্চা-বুদ্ধিমান-হয়
যেসব মায়েরা নিরামিষভোজি তারা উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস থেকে যেমন ছোলা বাদাম দুধ দই ও সয়াবিন গ্রহণ করতে পারেন প্রোটিন শুধু শিশুর গঠনে সাহায্য করেনা মায়ের শরীরের হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের কোষ মেরামতেও সহায়তা করে প্রোটিনের অভাবে গর্ভকালীন জটিলতা যেমন সময়ের আগেই সন্তান প্রসব শিশুর ওজন কম হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে হলে একজন মাকে অবশ্যই প্রতিদিন তার শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রোটিন হিসাব করে নিতে হবে অনেক সময় ডাক্তাররা বাড়তি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। তবে প্রকৃতি উৎস থেকে প্রোটিন নেওয়ায় ভালো খাবারের ভারসাম্য রেখে প্রোটিনের সাথে অন্যান্য পুষ্টিও নিতে হবে গর্ভাবস্থায় প্রতিটি দিনই শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রোটিনকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

গর্ভাবস্থায় কেন চা ও কফি এড়িয়ে চলা উচিত

চা ও কপি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হলেও, গর্ভাবস্থায় এগুলো গ্রহণের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। কেননা এই পানীয় দুটির মূল উপাদান হচ্ছে ক্যাফেইন যা অতিরিক্ত মাত্রায় গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যাফেইন দ্রুত নার্ভ সিস্টেমকে উজ্জীবিত করে যা গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ বাড়াতে পারে এতে করে গর্ভবতী মা উদ্বিগ্ন ঘুম কম হওয়া বা মাথাব্যথার মতো সমস্যাই ভুগতে পারেন। ক্যাফেইন গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও প্রভাব ফেলে এটিই গর্ভফুল পার হয়ে সরাসরি শিশুর শরীরে চলে যায় কিন্তু শিশুর লিভার এখনো পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে না তাই ক্যাফেইন শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায় এবং শিশুর বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায় গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত চা বা কপি গ্রহণের ফলে সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব হওয়া বা শিশুর ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা অভ্যাসগত কারণে সকাল বা বিকালে চা ও কফি পান করেন যদিও একেবারে বাদ দেওয়া কঠিন হতে পারে তবে দিনে ২০০ মিলিগ্রাম বা এর বেশি ক্যাফেইন যুক্ত পানিও গ্রহণ না করায় উত্তম এক কাপ চায়ে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে এক কাপ কফিতে থাকে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম তাই দিনে এক কাপ চা বা হালকা কফি খাওয়া সীমিত পরিমানে করলে ক্ষতি না হতেও পারে, তবে নিয়মিত অতিরিক্ত গ্রহণ অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাও কফির বিকল্প হিসেবে গর্ভবতী মায়েরা স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেশি নিতে পারেন যেমন লেবু পানি দুধ ফলের রস ইত্যাদি মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় প্রতিটি সিদ্ধান্তই শিশুর সুন্দর ও সুস্থ ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত তাই অভ্যাসগত পানীয় থেকে সচেতন থাকা উচিত চা ও কফির বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করলে মা ও শিশু দুজনে উপকৃত হবে।

গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় 

গর্ভাবস্থায় অনেক মা বাবাই চান যেন তার সন্তান ফর্সা বা উজ্জ্বল বর্ণের অধিকারী হয়। তবে গায়ের রং প্রধানত নির্ভর করে বংশগতির ওপর। অর্থাৎ মা-বাবার গায়ের রং ও জিন তথ্যই শিশুর গায়ের রঙ নির্ধারণের মূল ভূমিকা রাখে তবে কিছু  খাবার আছে যেগুলো খেলে শিশু ত্বক সুস্থ উজ্জ্বল এবং লাবণ্যময় হয়। তাই শুধুমাত্র ফর্সা নয় বরং শিশুর স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু পুষ্টিকর খাবার গর্ভঅবস্থায় খাওয়ানো উচিত। গর্ভ অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই জরুরী পানি শরীরের টক্সিন দূর করে যা শিশুর ত্বকে পরিষ্কার ভাবে আনতে সাহায্য করে পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমলা কমলা লেবু পেয়ারা ইত্যাদি খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয় যা ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।


বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ দুই ছানা এগুলো শিশুর হাড় গঠনে ও ত্বকের উন্নয়নের সহায়ক এগুলোতে থাকা ভিটামিন ই এবং প্রোটিন শিশুর ত্বককে মসৃণ ও স্বাস্থ্য ধন রাখে ঘরে তৈরি ঘি সাদা চালের ভাত এবং ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে তবে কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় সবকিছুই পরিমিত পরিমানে খাবার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে গায়ের রং এর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুর সুস্থতা ও মানসিক বিকাশ তাই প্রকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।

সবুজ শাকসবজি শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সহায়ক

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে কেননা এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ইত্যাদি উপকারী খনিজ পদার্থ যা গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে অত্যন্ত উপকারী সবুজ শাকসবজি যেমন পালন শাক, লাল শাক,মুলা শাক এগুলো মায়ের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং শিশুর নিউরাল টিউব প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি-৯ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে একটি,এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর গঠনে সহায়ক এই উপাদানটি প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় এছাড়াও সবুজ শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুর মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় অনেক মা খেতে চায় না বা না চাওয়ার কারণে সবুজ শাকসবজি এড়িয়ে চলেন এটি মোটেও ঠিক নয় সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খেলে শিশুর স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয় এবং সে ভবিষ্যতে দ্রুত শিখতে পারে এমন মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। মায়ের জন্য শাকসবজি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজমে সহায়তা করে যা গর্ভকালীন আরামদায়ক সময় পার করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শুধু একটি নয়, বিভিন্ন ধরনের শাক পরিবর্তন করে খাওয়া উচিত যেন সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় এবং তার সাথে রান্নার সময় খুব বেশি তেল বা মসলা ব্যবহার না করা ভালো। বাচ্চার বুদ্ধি ও আচরণ অনেকটাই গর্ভে থাকা অবস্থায় তৈরি হয় তাই শুরু থেকেই মায়ের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে বাচ্চা লম্বা হয়

শিশুর উচ্চতা নির্ভর করে প্রধানত জেনেটিকস বা বংশগতির ওপর। তবে গর্ভঅবস্থায় মা যদি সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে শিশুর হাড়ের গঠন ভালো হয় এবং সে ভবিষ্যতে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় বিশেষ করে ক্যালসিয়াম প্রোটিন ও ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার খেলে হাড়ের গঠন বাড়তে সাহায্য করে তাই এই সময় খাবারের নির্বাচনে সচেতন থাকা জরুরি। দুধ দই ছানা এসব ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হাড়কে মজবুত করে এবং শিশুর হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ডিম মাছ মুরগির মাংস ইত্যাদি প্রোটিনের উৎস যা শিশুর কোষ গঠনে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এছাড়া ভিটামিন ডি সূর্যের আলোর মাধ্যমে পাওয়া যায় তবে অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায়-কি-খাবার-খেলে-বাচ্চা-বুদ্ধিমান-হয়
বাদাম ডাল ও জাতীয় খাবার থেকে প্রোটিন ও জিন পাওয়া যায় যা হাড়ের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। হজম ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরী যা মায়ের শরীর সুস্থ রাখে এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। খেয়াল রাখতে হবে শুধু ভালো খাবার খেলেই হবে না তা নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে অতিরিক্ত চিনি তেল ও প্রক্রিয়াজাত্য খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ তা পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করে এছাড়া গর্ভাবস্থায় মা যত বেশি সচেতন থাকবেন শিশুদের মূল গঠনে ভালো হবে। তাই লম্বা ও সুস্থ বাচ্চা চাইলে এখন থেকে সচেতন হয়ে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার দরকার।

গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার শিশুর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে

গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই শিশুর মস্তিষ্কের গঠন শুরু হয় আর এই গঠন অনেকাংশেই নির্ভর করে মায়ের খাবারের ওপর শিশুর জন্ম দিতে চাইলে মাকে গর্ভকালীন সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে কারণ শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনের জন্য প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা-৩ এসিড এর মত পুষ্টিকর উপাদান খুবই দরকার যদি মায়ের খাদ্য তালিকায় উপাদানগুলোর ঘাটতি থাকে তাহলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে মাছ ডিম দুধ বাদাম এবং সবুজ শাকসবজি এসব খাবার গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ শিশুর নিউরন গঠনে সাহায্য করে। আবার ডিমের কুসুমে থাকা কঠিন উপাদান মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক এ সময়কার খাবার শুধু গঠনেই নয় শিশুর বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি স্থাপনে সাহায্য করে। 

ফল ও শাকসবজিতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এ বড় সহায়ক ভূমিকা রাখে। গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন শিশুর স্নায়ুতন্ত্র শক্তিশালী করে আবার কলা, আপেল খেজুর থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। শুধু তাই নয় পর্যাপ্ত পানি পান মায়ের শরীর সুস্থ রাখে এবং রক্তের মাধ্যমে শিশুকে পুষ্টি পৌঁছে দেয়। মনে রাখতে হবে মায়ের মানসিক অবস্থা এবং খাওয়া-দাওয়া দুটোই শিশুর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে  অতএব, দুশ্চিন্তা কমিয়ে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখলে শিশুর মস্তিষ্ক ও ভালোভাবে বিকাশিত হয়। অতিরিক্ত চিনি, কোমল পানীয় ইত্যাদি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এই খাবারগুলো শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

একজন গর্ভবতী মা যদি গর্ভ অবস্থায় খাদ্যাভাসে যত্নশীল হন তবে তার শিশু জন্মের পর আরো স্মার্ট ও শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহী হতে পারে। তাই খাদ্য তালিকায় প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরী। সুস্থ,বুদ্ধিমান ও সক্ষম একটি বাচ্চার জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিটি দিনের খাওয়া দাওয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এতক্ষণ উপরে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে একজন গর্ভবতী মা গর্ভস্থ অবস্থায় তার সন্তানের যত্ন নিতে পারেন এবং কি কি নিয়ম মেনে খাবার খেতে পারেন জেন তার গর্ভের সন্তান সুস্থ,সুন্দর ও সুসাস্থের অধিকারি হয়। আশাকরি উক্ত আলোচনা মেনে চললে উত্তম ফলাফল পাবেন। তো, আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তি আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;

comment url