টেনশন ছাড়াই কিভাবে কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করবেন জানুন বিস্তারিত
আপনি কি কানাডায় বৈধভাবে কাজ করতে চান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। যারা কানাডায় চাকরি করতে চান তাদের জন্য এই লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক কাজে আসবে।
ভিসার ধরন, কাজের জন্য কোনটা উপযুক্ত আর কিভাবে আবেদন করবেন সবকিছু একেবারে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনি যদি কানাডায় বৈধভাবে কাজ করতে চান তাহলে এই তথ্যগুলো জানা খুবই দরকার তাই বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।পেজ সুচিপত্রঃ কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি ও এর প্রকারভেদ
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন যোগ্যতা
- কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কি কি লাগে
- ভিসা প্রসেসিং এর সময়
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত
- যারা আবেদন করতে পারবেন
- কানাডায় কোন কাজের চাহিদা বেশি
- কানাডায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতন কত
- উপসংহারঃ কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি ও এর প্রকারভেদ
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলতে কানাডা সরকার আপনাকে সেখানে বৈধভাবে কাজের যে
অনুমতি দিবে মূলত তাকেই বোঝায়। আপনি যদি বৈধভাবে কানাডায় কাজ করতে চান তাহলে এই
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ছাড়া সেটা সম্ভব না। এটা হচ্ছে এক ধরনের কাজের অনুমতি
মাত্র, যেমন আমাদের দেশে কেউ চাকরি করতে গেলে নিয়োগপত্র লাগে ঠিক তেমনি ভাবেই
কানাডায় কাজ করতে হলে এই ওয়ার্ক পারমিট লাগে।
কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রধানত ২ ধরনের যেমন
- নির্দিষ্ট চাকরিদাতার অধীনে কাজের অনুমতি
- মুক্ত কাজের জন্য অনুমতি
নির্দিষ্ট চাকরীদাতার অধীনে কাজের অনুমতি
নির্দিষ্ট চাকরিজাতার অধীনে কাজের অনুমতি এই ভিসা হলে আপনি শুধু সেই চাকরিজাতার
অধীনে কাজ করতে পারবেন আপনাকে কাজ দিয়েছেন যেমন ধরুন আপনাকে টরেন্টের একটি
কোম্পানি চাকরির অফার দিল তখন আপনি শুধু সেই কোম্পানিতে কাজ করতে পারবেন এই ভিসার
ক্ষেত্রে
- কাজের ধরন নির্দিষ্ট থাকে
- কাজের সময় নির্ধারিত থাকে
- জায়গাও আগে থেকে ঠিক করা থাকে
মুক্ত কাজের জন্য অনুমতি
মুক্ত কাজের জন্য অনুমতি এই ভিসাই কাজ করা একটু সুবিধা জনক হয়। কেননা এর মাধ্যমে
আপনি কানাডায় গিয়ে যেকোনো ধরনের চাকরি করতে পারবেন, ধরুন আপনি কানাডায় গিয়ে
বুঝলেন অন্য কোন কোথাও ভালো কাজের সুযোগ আছে তাহলে সেখানে চলে যায় যেতে পারবেন,
তবে এই ভিসা সবার জন্য নয় সাধারণত যাদের পরিবার কানাডায় আছে কিংবা যেসব
শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করছেন তাদের জন্য এবং তাদের স্বামী-স্ত্রীদের জন্য এ
ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন যোগ্যতা
শুধুমাত্র কানাডা যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেই হবে না। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে ধাপে
ধাপে, আর এখানেই এসে অনেকেই ভুল করে ফেলেন যেমন অনেকেই জব অফার লেটার ছাড়াই
আবেদন করে বসেন যেটা একদমই ঠিক না। আগে নিজের যোগ্যতা যাচাই করুন ডকুমেন্ট ঠিক
আছে কিনা তা চেক করুন, তারপর পরামর্শ নিয়ে আবেদনের পথে এগিয়ে যান। কিন্তু এখানে
একটি প্রশ্ন থেকেই যায় আপনি কি আদৌ এই ভিসার জন্য যোগ্য কি না? চলুন ধাপে
ধাপে বুঝে নেই কাদের জন্য এই ভিসার দরজা খোলা।
- চাকরির অফার থাকতে হবে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার হাতে কানাডার যে কোন কোম্পানির চাকরির
অফার লেটার থাকতে হবে এটা কানাডায় প্রবেশের মূল চাবিকাঠি যা ছাড়া ভিসার দরজা
খুলবে না
- LMIA ডকুমেন্ট থাকতে হবে
অনেক সময় আপনার নিয়োগকর্তাকে LMIA (Labour Market Impact
Assessment) নামের একটি অনুমোদন নিতে হয়, এটা দিয়ে প্রমাণ করা হয় কানাডার
লোক না পেয়ে তারা আপনাকে নিয়োগ দিচ্ছে।
- সঠিক কাগজপত্র থাকতে হবে
আপনার পাসপোর্ট, ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট এসব ঠিকঠাক
থাকলে আপনি এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাস করতে হবে
আপনাকে মেডিকেল চেকআপ করাতে হতে পারে এটা দিয়ে প্রমাণ করতে হয় আপনি
সম্পূর্ণরূপে সুস্থ আছেন এবং কানাডার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নন।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
আপনার নামে যেন কোন অপরাধের মামলা না থাকে এটা প্রমাণ করার জন্য এই কাগজের দরকার
হয়।
- আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে
আপনি যেন কানাডায় গিয়ে প্রথম দিকে নিজের খরচে চলতে পারেন তার জন্য কিছু পরিমাণ
টাকা ব্যাংকে দেখাতে হয়।
কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কি কি লাগে
আপনি যদি বৈধভাবে কানাডায় কাজ করতে চান, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও
শর্ত মানতে হয় এ বিষয়গুলো পূরণ করলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে
চলুন দেখি কি কি প্রয়োজন হয়
- চাকরির অফার লেটার
- LMIA অনুমোদন
- বৈধ পাসপোর্ট ও ছবি
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ বা মেডিকেল সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক প্রমাণ
- সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদন ফরম
- আবেদন ফি জমা দেওয়ার রশিদ
ভিসা প্রসেসিং এর সময়
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রসেসিং সময় নির্ভর করে আপনি কোন দেশ থেকে আবেদন করছেন
এবং আবেদনটি কোন ধরনের তার ওপর। সবকিছু ঠিক থাকলে এর জন্য সাধারণভাবে সময় লাগে ৮
থেকে ২৪ সপ্তাহ তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ৩ থেকে ৪ মাস বা আরো কম বা বেশি হতে পারে।
ভিসা কনফার্ম হয়ে গেলে তারপর আপনি বিমানের জন্য টিকেট কাটতে পারেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত
আপনি যদি কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে খরচের
বিষয়টা আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো। অনেকে আছেন দেখা যায় ভিসার প্রক্রিয়া শুরু
করার পর খরচ নিয়ে টানা পড়েন শুরু হয়। যেটা সহজেই এড়ানো যেত যদি আগে থেকেই
পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি থাকতো। তাই, চলুন দেরি না করে জেনে নেই কোন কোন
জায়গায় কত টাকা খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৫০০০ টাকা আয় করার সেরা ১০ টি উপায়
- ওয়ার্ক পারমিট আবেদন ফ্রি এর জন্য প্রায় বাংলাদেশি টাকায় ১২,৫০০ টাকা খরচ হতে পারে
- বায়োমেট্রিক ফি এর জন্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হতে পারে
- ওপেন ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডার এর জন্য প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে
- মেডিকেল পরীক্ষা ফি এর জন্য ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি এর জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হতে পারে
- দালাল বা এজেন্ট নিলে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে
যারা আবেদন করতে পারবেন
আপনি যদি কানাডায় সমস্ত শর্ত পূরণ করে বৈধভাবে কাজ করতে আগ্রহী হন তাহলে আপনি
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- যাদের কাছে কানাডিয়ান কোম্পানির চাকরির অফার আছে
- কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরির অফার লেটার থাকতে হবে
- যারা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় উপযুক্ত
- নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
- যারা শারীরিকভাবে সুস্থ
- মেডিকেল চেকআপে উত্তীর্ণ হতে হবে
- যাদের কোন অপরাধমূলক রেকর্ড নাই
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে
- যারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী
- কানাডায় প্রাথমিক খরচ চালানোর মতো টাকা থাকতে হবে
- কানাডায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গী হলে
কানাডায় কোন কাজের চাহিদা বেশি
কানাডায় বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ শ্রমিক ও পেশাদার দের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে
আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথে মিলিয়ে যেসব পেশায় চাহিদা বেশি সেগুলোর দিকে
আবেদন করার চেষ্টা করেন এতে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে
যাবে।
- স্বাস্থ্য সেবা সেক্টর বা নার্স, কেয়ার গিভার, পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার
- কনস্ট্রাকশন লেবার যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, কনস্ট্রাকশন হেল্পার
- আইটি ও টেক সেক্টর যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপার, আইটি সাপোর্ট সিস্টেম অ্যানাল লিস্ট
- ড্রাইভার ও পরিবহন খাত যেমন ট্রাক ড্রাইভার, ডেলিভারি ড্রাইভার
- ফুড সার্ভিস যেমন ফাস্টফুড ওয়ার্কার ইত্যাদি
- কৃষি খাত যেমন ফার্ম ওয়ার্কার, হারভেস্টার ইত্যাদি
- হোটেল ও ক্লিনিং সেক্টর যেমন হাউস কিপার ক্লিনার হোটেল স্টাফ
কানাডায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতন কত
কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন ঘন্টা প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ১৯ কানাডিয়ান ডলার যা
বাংলাদেশী টাকায় আনুমানিক ১৩৫০ টাকা থেকে ১৭৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। আর সর্বোচ্চ
বেতনের কিছু পেশা আছে যেগুলোতে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত হয়ে
থাকে যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মত হয়।
উপসংহারঃ কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া কঠিন কিছু নয়। যদি আপনি সঠিকভাবে প্রস্তুতি
নেন এবং দরকারি যোগ্যতা ও কাগজপত্র ঠিকভাবে জমা দেন। কোন কাজের চাহিদা বেশি কার
আবেদন করতে পারবেন এবং কেমন খরচ হতে পারে সবকিছু যদি আগে থেকেই জানা থাকে তাহলে
আপনার যাত্রাটা হবে অনেক সহজ ও ঝামেলা মুক্ত।
আশা করি আজকের আলোচনা আপনার উপকারে এসেছে, যদি আজকের এই আলোচনা আপনার নূন্যতম
উপকারে আসে তাহলে সেটাই আমার সার্থকতা। আপনার কানাডার ভিসার স্বপ্ন সফল হোক এই
শুভ কামনায় এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এর পরের কোন
আর্টিকেলে আবার দেখা হবে। এই আর্টিকেলের বিষয়ে আপনার কোন মতামত বা অভিযোগ থাকলে
যোগাযোগ করুন বা মন্তব্য করুন।
অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;
comment url