ডাইবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা যা জেনে অবাক হবেন

 এই আর্টিকেলের মধ্যে ডাইবেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নিয়েই পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো ডাইবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ কিছু খাবার তালিকা যা অনেক ডাইবেটিস রোগীদের ই জানা নাই। পুরো বিষয় জানতে আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।

ডাইবেটিস-রোগীর-নিষিদ্ধ-খাবার-তালিকা
ডাইবেটিস এখন আমাদের আশে পাশের মানুষদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যাতে পরিণত হয়েছে। এমন অনেক ডাইবেটিস এর রোগি আছেন যারা না জেনেই এমন কিছু খাবার খেয়ে ফেলেন যা ডাইবেটিস রোগীদের শরীরে গভির প্রভাব ফেলে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানবো কোন খাবার গুলো ডাইবেটিস রোগীরা এড়িয়ে চলবে  এবং কেন এই খাবার গুলো ক্ষতিকর। 

পেজ সুচিপত্রঃ ডাইবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডাইবেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

অনেকেই আছেন জারা তাদের ডাইবেটিস আক্রান্ত প্রিয়জনদের সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে অনলাইনে বিভিন্ন সময় ডাইবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা জানতে সার্চ করে থাকেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান না, তাদের জন্যই মূলত আজকের এই আর্টিকেল লিখা আশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ডাইবেটিস রোগীদের সুস্বাস্থাস্থ্যের জন্য শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা  ঠিক রাখা খুবই দরকারী একটা কাজ। আমাদের দৈনিক খাবারের মধ্যে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো শরীরে দ্রুতো গ্লুকোজের  মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তের ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে ডাইবেটিস আরো জটিলাকার ধারণ করে। এসব খাবার নিয়োমিত খেলে ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গিয়ে নানান শারীরিক জটিলাকার ধারণ করতে পারে এমনকি কিডনি, চোখ, হার্ট সহ নানা অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

নিচে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ কিছু খাবারের তালিকার নাম দেওয়া হলোঃ
  • সাদা ভাত
  • মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবার
  • মিষ্টি ফল যেমন কাঁঠাল আঙুর কলা
  • কোমল পানীয় ও প্যাকেট জুস
  • ফাস্টফুড যেমন বার্গার, পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
  • বিস্কুট ও কেক
  • সাদা ময়দার তৈরি রুটি পাউরুটি
  • ঘি মাখানো বা অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার
  • ফ্যাট যুক্ত দুগ্ধজাত খাবার
  • মধু ও চকলেট

খাবারের নাম যে কারণে নিষিদ্ধ
সাদা ভাত রক্তে দ্রুতো শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
মিষ্টি ও চিনি সরাসরি রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়
কলা,কাঁঠাল, আঙ্গুর প্রাকৃতিক চিনি বেশি ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়
কোমল পানীয় ও প্যাকেট জুস চিনি ও কার্বনেটেড উপাদান বেশি
ফাস্টফুড কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়
বিস্কুট ও কেক চিনি ময়দা ও কৃত্তিম ফ্লেভার থাকে
সাদা পাউরুটি বা ময়দার রুটি রিফাইন্ড কার্বস থাকে যা দ্রুতো রক্তে গ্লুকোজ রুপান্তরিত করে
তেলে ভাজা খাবার কোলেস্টরেল ও ফ্যাট বেশি যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
ঘী ও দুগ্ধজাত খাবার স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি যা ইন্সুলিনের কার্যকারিতা হারায়
মধু ও চকলেট প্রক্রিয়াজাত চিনি যা শর্করার পরিমাণ বাড়ায়

ডাইবেটিস রোগের লক্ষণ কেমন হয় 

ডাইবেটিস শুধুমাত্র বাংলাদেশেই না সারা বিশ্বে এক ভয়াবহ মহামারিতে রুপ ধারণ করেছে, এমন অনেক মানুষ আমাদের আশেপাশে আছেন জারা জানেন ই না যে তাদের শরীরে এই নিরব ঘাতক বাসা বেঁধেছে। অনেক সময় ডাইবেটিস এর লক্ষণ বোঝা যায় না তবে শারীরিক কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আন্দাজ করা যায়, কেমন শারীরিক পরিবর্তন ডাইবেটিস এর ঝুঁকি বাড়ায় সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলোঃ 

ডাইবেটিস এর সাধারণ লক্ষণ সমূহ 

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হয়
  • খুব বেশি পরিমাণে পিপাসা লাগে
  • প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
  • সব সময় ক্লান্তি লাগা বা শক্তি কমে যায়
  • দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়
  • ক্ষত বা কাটা সহজে না শুকানো
  • হাতে পায়ে ঝিমঝিম বা অবশ ভাগ হওয়া
  • মানসিক অস্থিরতা বা মেজাজ খিটখিটেই হয়ে যায়
  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
ডাইবেটিস বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যদি আপনার বা আপনার পরিচিত নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কারো এমন লক্ষণ প্রকাশ পায় তো দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ কেননা এটি সঠিক সময়ে চিহ্নিত না করে দেরি করলে শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে তাই আমাদের আগে থেকেই সাবধান হওয়া উচিত। 

টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডাইবেটিস কী

আমাদের সমাজে এমন অনেক ডাইবেটিস রোগী আছেন যে তারা জানেন তাদের ডাইবেটিস হইছে কিন্তু এইটা জানেন না যে কি ধরণের ডাইবেটিস হইছে। লক্ষণ ভেদে ডাইবেটিস সাধারণত ২ প্রকার হয়ে থাকে যেমনঃ টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডাইবেটিস এই দুই ধরণের ডাইবেটিস এর আবার চিকিৎসা পদ্ধতি ও আলাদা ধরণের হয়ে থাকে তাই এদের মধ্যে পার্থক্য যেনে রাখা খুবই দরকারি। তাহলে দেরি না করে এই দুই ধরণের ডাইবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 
 
টাইপ-১ টাইপ-২
এটি সাধারণত বাচ্চা,কিশোর ও তরুণ সমাজের মধ্যে বেশি দেখা যায় তাই একে জুভেনাইল ডাইবেটিস বলে অতিরিক্ত স্থুলতায় ভোগা ও বয়ষ্ক মানুষদের এই টাইপের ডাইবেটিস বেশি হয়
শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা ইমিউনি সিস্টেম ভেঙে ফেলে ফলে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে কিন্তু সঠিক যায়গায় ব্যাবহার করতে পারে না
এই টাইপের রোগীরের প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয় লক্ষণ প্রকাশ না করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে
হঠাৎ করেই লক্ষণ প্রকাশ পায় বংশগত ডাইবেটিস থাকলে টাইপ ২ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ইনসুলিনের উপর সবাস্থ্যকর খাবার,ব্যায়াম ও ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে ইনসুলিনের দরকার পড়তে পার

আপনাদের মধ্যে পরিচিত কেউ থাকলে তিনি আগে কোন ধরণের ডাইবেটিস আক্রান্ত তা আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কেননা দুই ধরণের ডাইবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা ধরণের হবে। কারণ সঠিক চিকিৎসা তখনি সম্ভব যখন সঠক রোগ নির্ণয় সম্ভব। 

ডাইবেটিস এর সাধারণ মাত্রা কত

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি জটিল শারীরিক অবস্থা যখন শরীর ঠিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা সঠিকভাবে কাজে করতে ব্যর্থ হয় এর ফলে শরীরে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বেড়ে যায় যার জন্য শরীরে ডাইবেটিসের সৃষ্টি হয়।
ডাইবেটিস-রোগীর-নিষিদ্ধ-খাবার-তালিকা

ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এক এক সময়য় এক এক রকমের হতে পারে যেমনঃ খাওয়ার আগে এক খাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে আবার ঘুম থেকে উঠার পরে সময়য় ভেদে আলাদা মাত্রা থাকতে পারে। নিচে টেবিল ছকের মাধ্যমে সময়য় ভেদে স্বাভাবিক রকের চিনির মাত্রা দেওয়া হলোঃ- 
সময় স্বাভাবিক মাত্রা ডাইবেটিস আছে এমন ব্যাক্তির লক্ষ্য মাত্রা
খালি পেটে ৭০-৯৯ mg/dl ৮০-১৩০ mg/dl
খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে ১৪০ mg/dl এর কম ১৮০ mg/dl এর কম
হেমোগ্লোবিন A1C (৩ মাসের গড়) ৫-৭% এর কম ৭% এর কম রাখতে হব

ডাইবেটিস হওয়া মানেই যে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া বিষয়টি এমনটা না আবার এটাকে একেবারে অবহেলা করাও ঠিক না সকলের উচিত ডাইবেটিস হওয়ার আগেই মেপে দেখা এতে করে ডাইবেটিস এর মাত্রা যেনে সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা যাবে। 

ডাইবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা

এমন অনেক ডাইবেটিস রোগী আছেন জারা সকালের  খাবার খান না বা অনেক শাকসবজি বা পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান না ডাইবেটিস বেড়ে যাবার ভয় থেকে যা মোটেও ঠিক কাজ না কারণ এইসকল খাবার থাকে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ যা ডাইবেটিস রোগীদের শরীরের জন্য একান্ত জরুরি। তাই ডাইবেটিস আক্রান্ত কোন রোগীর উচিত হবে না কোন বেলার খাবার এড়িয়া যাওয়া। ডাইবেটিস রোগীরা কোন বেলায় কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করবে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ

সকালের নাস্তা

  • ১টি রুটি 
  • ১ট সেদ্ধ ডিম
  • কিছু শাকসবজি
  • চিনি ছাড়া এক কাপ লাল চা বা গ্রীন টি

দুপুরের খাবার

  • ১ কাপ লাল চালের ভাত
  • মুরগীর মাংস বা মাছ
  • কিছু পরিমাণে শাকসবজি
  • শশা,টমেটো বা গাজরের সালাদ

বিকালের হালকা নাস্তা

  • ১টি ছোট আপেল বা এক টুকর পেঁপে 
  • ১ কাপ চিনি ছাড়া চা

রাতের খাবারে

  • ১টি রুটি 
  • ডিম বা মাছ
  • শাকসবজি
  • সালাদ
এসব খাবারের পাশাপাশি নিয়োমত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। চিনি ও চিনি জাতীয় সকল খাবার বাদ দিতে হবে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট বা এর বেশি সময় ধরে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। 

FAQ

প্রশ্নঃকোন কোন খাবার খেলে ডায়াবেটিস হবে না?
উত্তরঃ বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি,ডাল,লাল চাল,ওটস ইত্যাদি আবার বাদাম,আপেল,পেপে ও পানি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ডাইবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।

প্রশ্নঃ ঔষধ ছাড়া কিভাবে ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
উত্তরঃ নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাবার তালিকা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা, মানসিক চাপ কমানোর এবং নিয়মিত রক্তে চিনির মাত্রা মাপার মাধ্যমে ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

শেষ কথাঃ ডাইবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

এতোক্ষন আমরা ডাইবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম আশা করি উক্ত আলোচনা থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন ও জানতে পেরেছেন ডাইবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে আপনার পাড়া প্রতিবেশী বা নিকট আত্মীয়দের মাঝে কারো ডাইবেটিস হলে এই আর্টিকেলে উল্লিখিত বিষয়ে পরামর্শ দেবেন ও আগে থেকেই সতর্ক হবেন এই কামণা করে এখানেই শেষ করছি। 

এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞেসা বা জানার থাকলে কমেন্ট করুন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;

comment url