ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস
ব্রণ শুধু চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে না, আত্মবিশ্বাস ও কমিয়ে দেয়। অনেকেই আছেন যারা বাজারের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ফল না পেয়ে হতাশ হয়। এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে ৭টি প্রমাণিত ঘরোয়া উপায়, যা একদম প্রাকৃতিক, নিরাপদ ও সহজলভ্য উপাদানে তৈরি। লেবু, মধু, এলোভেরা তুলসী পাতা সহ নানা উপাদানের ব্যবহার ও ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে। যেন আপনি সহজেই বুঝতে পারেন কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
প্রতিটি টিপস বাস্তব গ্রহণযোগ্য এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণ দ্রুত কমতে শুরু করবে। যারা কেমিক্যাল মুক্ত ও টেকসই সমাধান খুজছেন, এই গাইড তাদের জন্যই। সুন্দর ও নমনীয় ত্বক পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।পেজ সুচিপত্রঃ ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস
- ব্রণের ধরন ও ব্রণের দাগ কত প্রকার ও কি কি
- ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ব্রণের দাগ মুছে ফেলুন তুলসী পাতার সাহায্যে
- এলোভেরার ফেস মাস্ক ব্যবহার করে ব্রণের দাগ দূর করুন
- লেবু ও গোলাপজলের মিশ্রণ ব্যবহার করে ব্রণের দাগ দূর করুন
- খাবার খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ব্রণের কারণ ও সমাধান
- বরফ থেরাপির মাধ্যমে ব্রণের ফোলা ভাব কমান
- রাতে ঘুমানোর আগে কি করলে ব্রণ উঠে না
- মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্রণ হলে কি করনীয়
- শেষ কথাঃ ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস
ব্রণের ধরন ও ব্রণের দাগ কত প্রকার ও কি কি
অনেকেই ভাবেন যে ব্রণ তো ব্রনই হয় সব ধরনের ব্রোনেই একই রকম। কিন্তু
বাস্তবে প্রতিটি ব্রণের ধরন হয় আলাদা, আর প্রতিটা দাগের পেছনেও থাকে এর
আলাদা-আলাদা কারণ ও যত্নের প্রয়োজন। তাই সঠিকভাবে ব্রণের ধরন ও দাগ চেনা জরুরী
তা না হলে ভুল চিকিৎসায় সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
ব্রণের ধরণ
- হোয়াইটহেড (Whiteheades): যা ছোট সাদা দানার মত চামড়ার নিচে আটকে থাকা ফোলা ভাব।
- ব্ল্যাকহেড (Blackheads): যা কালো ছোট দানা যা লোমকূপে তেল ও ময়লা জমে তৈরি হয়।
- পাপুলস (Papules): এটি লালচে ফোলা ভাবযুক্ত ব্রণ, ব্যথা থাকতে পারে।
- পুসচুলস (Pustules): এটি পাপুলসের মতোই, তবে মাথায় পুজ থাকে।
- নোভিউলস (Nodules): এটি গভীরে ফোলা যুক্ত শক্ত এবং ব্যথাযুক্ত ব্রণ।
- সিস্টিক অ্যাকনে (Cystic Acne): এটি সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের ব্রণ গভীরে পুচ ভর্তি বড় ফোলা গাঠ হয়ে থাকে।
ব্রণের দাগের ধরন
- হাইপারপিগমেন্টেশনঃ ব্রণের পর তোকে কালকে বা লাল দাগ পড়ে যায়।
- আইস পিক স্কারঃ ছোট গভীর গর্তের মতো দাগ যা দেখতে বরফ কাটা দাগের মত হয়।
- বক্সকার স্কারঃ কোনাকুনি ধার বিশিষ্ট গভীর দাগ তুলনামূলক চওড়া আকৃতির হয়।
- রোলিং স্কারঃ ত্বকে ঢেউয়ের মত উঁচু নিচু তৈরি করে
- হাইপারট্র্যফিক স্কারঃ এটি ত্বকের উপরে ওঠা মোটা দাগ বা টিউমারের মত চেহারা নেয়।
আপনার ত্বক যেমনি হোক সেটাই আপনার পরিচয় এর একটি অংশ ব্রণের ধরন বা দাগ যদি
আপনি ঠিকভাবে চিনে নেন, তাহলে সমাধান খুঁজে নেওয়া অনেক সহজ হয়। একটু সচেতনতা
কিছু ঘরোয়া যত্ন আর প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এই দিনেই লুকিয়ে আছে সুস্থ
ত্বকের চাবিকাঠি।
ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
অনেক সময় ব্রণ হয়ে ভালো হয়ে গেলেও এর দাগ থেকে যায় অনেকেই এই দাগ নিয়ে
দীর্ঘদিন দুশ্চিন্তায় ভুগেন, যা আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। বাজারে নানা
প্রসাধনে থাকলেও অনেক সময় এগুলো কেমিক্যাল যুক্ত হওয়ার কারণে ত্বকের মারাত্মক
ক্ষতি করতে পারে। তাই ঘরোয়া উপায়ে নিরাপদ ভাবে ব্রণের দাগ দূর করা অনেক
বেশি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী।
নিচে এমন কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো, যা নিয়মিত
ব্যবহার করলে আপনি সহজেই পেতে পারেন দাগহীন উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক।
লেবু ও মধুর ফেস প্যাক
লেবু ও মধু ব্রণের দাগ দূর করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক সমাধান এটি তৈরিতে
যা যা প্রয়োজন।
- এক চা চামচ লেবুর রস
- এক চা চামচ বিশুদ্ধ মধু
- পরিষ্কার পটল বল বা ব্রাশ
কেন এটি কার্যকর
- লেবুর রসে প্রাকৃতিক বিচিং উপাদান রয়েছে যা ত্বকের দাগ হালকা করে এবং ত্বকের মৃত কোষ অপসারণে সাহায্য করে।
- মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ যা ত্বকের ক্ষত সারিয়ে তোলে এবং ত্বককে করে মসৃণ ও হাইড্রেটেড।
ব্যবহার পদ্ধতি ও ব্যবহার করার সময় এর পরামর্শ
ব্যাবহার পদ্ধতিঃ
- একটি ছোট পাত্র পরিমাপ মতো লেবুর রস ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন
- পরিষ্কার মুখে (বিশেষ করে যেসব স্থানে দাগ আছে)
- সেসব স্থানে এই মিশ্রণ কটন বা ব্রাশ দিয়ে আলতো করে লাগান।
- এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- শেষে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ব্যবহার করার আগে পরামর্শঃ
- সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই প্যাক ব্যাবহার করুন।
- যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা লেবুর রসের সাথে কিছুটা পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।
- দিনের বেলায় ব্যবহারের পর অবশ্যই সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন কারণ লেবুর রস সূর্যের আলোতে ত্বককে সংবেদনশীল করে তোলে।
-
ব্যবহারের আগে হাতের উপর টেস্ট করে নিন আপনার ত্বকে এলার্জি হচ্ছে কিনা।
-
কখনোই কাটা বা ব্রণ উঠা জায়গায় লেবুর রস লাগাবেন না।
ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া মানেই শুধুই সহজলভ্যতা নয়, বরং এটি একটি
স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পদ্ধতি। লেবু ও মধুর এই ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে
আপনি ধীরে ধীরে ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন এবং এর সাথে পাবেন উজ্জ্বল
ও মসৃণ একটি ত্বক। সৌন্দর্য রক্ষায় প্রকৃতি হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড়
বন্ধু।
ব্রণের দাগ মুছে ফেলুন তুলসী পাতার সাহায্যে
তুলসী পাতাকে বলা হয় ঘরের ডাক্তার, কেননা এই তুলসী পাতা সাধারণ সর্দি-কাশি
থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘরোয়া সাধারন অসুখে কাজে লাগে। কিন্তু অনেকে এটা জানে
না যে এই তুলসী পাতা ব্রণের ক্ষেত্রেও দারুণ ভূমিকা রাখে। তুলসী পাতা
প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক জেব্রণ এর দাগ ও ত্বকের অয়েল নিয়ন্ত্রণে
কার্যকর।
তুলসী পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন তুলসী পাতায় আছে শক্তিশালী এন্টি
ব্যাকটেরিয়াল ও এন টি ইনস্লামেটরি উপাদান ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে। ত্বকের
অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে। দাগ ও কালচে ভাব হালকা করতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতার ফেস মাস্ক বানাতে যা যা প্রয়োজনঃ
- ১০ থেকে ১২টি তাজা তুলসী পাতা।
- এক চা চামচ চন্দনের গুড়া।
- প্রয়োজনমতো পানি।
ব্যবহার করার পদ্ধতি
- তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এতে চন্দনের গোড়া মিশিয়ে ঘন প্যাক বানান।
- পরিষ্কার মুখে প্যাকটি লাগান।
- ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- শেষে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।
এলোভেরার ফেস মাস্ক ব্যবহার করে ব্রণের দাগ দূর করুন
আলোভেরার অনেক গুণাগুণ রয়েছে যেমন এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে, ক্ষত সারায় ও দাগ
হালকা করতে সাহায্য করে। এলোভেরার অনেক উপকারীদের মধ্যে কিছু উপকারিতা হলো
এলোভেরার জেল প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ঠান্ডা করে এবং ব্রণের প্রদাহ কমায়। এতে থাকা
এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ হালকা করে
ও ত্বক করে কমন ও মসৃণ।
এলোভেরার ফেস মাস্ক তৈরিতে যা যা লাগবে
- দুই চা চামচ গাছ থেকে সংগ্রহ করা খাঁটি এলোভেরার জেল।
- এক চা চামচ গোলাপ জল বা কাকুড়ের রস।
ব্যবহার করার পদ্ধতি
- ছোট একটি পাত্রে এলোভেরা জেল ও গোলাপজল মিশিয়ে নিন।
- পরিষ্কার মুখে এটি লাগান ও হালকা করে মাসাজ করুন।
- ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করুন।
আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে মুখে ব্যবহারের আগে অবশ্যই হাতে কিছু
পরিমাণে ব্যবহার করে যাচাই করে নিতে পারেন।
লেবু ও গোলাপজলের মিশ্রণ ব্যবহার করে ব্রণের দাগ দূর করুন
অনেক সময় ব্রণ ভালো হয়ে গেলেও তার রেখে যাওয়া কালচে বা লালচে দাগ আমাদের মুখের
সৌন্দর্যতাকে অনেকটাই ফিকে করে দেয়। বাজারের নানা দামি ক্রিম বা চিকিৎসার চেয়ে
অনেক সময় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। লেবু ও
গোলাপজলের মিশ্রণ একটি চমৎকার ঘরোয়া উপায়, যা নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ
হালকা করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করে।
কেন লেবু ও গোলাপজলের মিশ্রণ কার্যকর
লেবু প্রাকৃতিক রীতিম উপাদান হিসেবে কাজ করে এতে থাকা সাইট্রিক এসিড ত্বকের বৃদ্ধ
কোষ দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। আর গোলাপজল ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রেখে
তা হাইড্রেট করে এবং লেবুর অ্যাসিটিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে ত্বকে কোনরকম
জ্বালাপোড়া বা র্যাশ হওয়ার ঝুকি কমে যায়।
মিশ্রণ বানাতে যা যা লাগবে
- লেবুর রস এক চা চামচ
- গোলাপ জল এক চা চামচ (ত্বক বেশি সংবেদনশীল হলে গোলাপ জলের পরিমাণ একটু বাড়ানো যেতে পারে)
ব্যাবহারের নিয়ম
- প্রথমে একটি পরিষ্কার ছোট বাটিতে এক চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- একটি তুলার বল বা পরিষ্কার আঙুল দিয়ে মিশ্রণটি দাগের উপর হালকা করে লাগান।
- চোখ ও ঠোটের তার পাশে নাস্তা করুন কারণ এই অংশগুলো খুব সংবেদনশীল।
- ১০ থেকে ১৫ মিনিট মিশ্রণটি ত্বকে রেখে দিন।
- এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং একটি ময়েশ্চারাইজার লাগান।
প্রাকৃতিক এই দুই উপাদান সঠিক ব্যবহার করতে পারলে আপনি পাবেন দাগ হীন ও উজ্জ্বল
ত্বক কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া। বাজারের রাসায়নিক দ্রব্যের বদলে যদি
আপনি লেবু ও গোলাপজল এর মত নিরাপদ এবং কার্যকর উপায়ে নিজের ত্বকের যত্ন নিতে
চান তাহলে এটি হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত সমাধান।
তাই আর দেরি না করে আজ থেকে শুরু করুন আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক পরিচর্যা। সুন্দর
ত্বক হোক আপনার আত্মবিশ্বাসের প্রকাশের মাধ্যম।
খাবার খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ব্রণের কারণ ও সমাধান
ত্বকের যত্নে আমরা নানা সময় নানান রকমের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি, কিন্তু অনেকেই
ভুলে যায় ত্বকের স্বাস্থ্য আসলে শুরু হয় আমাদের ভেতর থেকে। অর্থাৎ আপনি কি খান
তা সরাসরি প্রভাব ফেলে আপনার ত্বকে। অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার
অভ্যাস যেমন ব্রণের কারণ হতে পারে। তেমনি কিছু পুষ্টিকর খাবার আছে যা ত্বকের ভিতর
থেকে সুস্থ রাখে এবং ব্রণ প্রতিরোধ করে।
এই আর্টিকেল থেকে আমরা বিস্তারিত জানবো কোন খাবার গুলো ব্রণের সম্ভাবনা বাড়ায়
আর কোন খাবার গুলো খেলে ত্বক হয় আরো পরিষ্কার স্বাস্থ্যবান ও ব্রণ মুক্ত।
যেসব খাবার খেলে ব্রণ হতে পারে
নিম্নোক্ত খাবার গুলো নিয়মিত বাহু অতিরিক্ত খেলে ত্বকের ব্রণের প্রবণতা বাড়ে
এগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে টপ অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে যেমনঃ
- চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার।
- ক্যান্ডি, মিষ্টিকেক, চকলেট।
- উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার রক্ত ইনসুলিন বাড়ায় ও ত্বকে তেল বৃদ্ধি করে যার ফলে ব্রণ হয়।
- দুধ, পনির, আইসক্রিম।
- দুধে থাকা হরমোন বা প্রোটনের কারণ।
- ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার।
- চর্বি জাতীয় উপাদানের ভরপুর খাবার ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা সফট ড্রিংকস খাওয়া।
- শরীরে পানি শূন্যতা বাড়ায় টক শুষ্ক করে ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে ফলে ব্রণ হয়।
যেসব খাবার খেলে ব্রণ কমে ও ত্বক ভালো থাকে
সবুজ শাক-সবজি, ফল-মূল, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
ত্বকের জন্য দারুন উপকারী। যেসব খাবার খেলে ব্রণ কমে ও ত্বক ভালো থাকে
সেসবের তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
- প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন।
- পালং শাক, ধনেপাতা, গাজর, টমেটো এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনের ভরপুর।
- ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে
- ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে এবং দাগ দূর করে
- আমন্ড, সূর্যমুখীর বীজ, চিয়াস ভিটামিন ই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত।
- গ্রিন এটি এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যার ফলে ত্বকে ব্রণ কমে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে ব্রণ কম হয়।
ত্বকের সৌন্দর্য কেবল বাইরে থেকে যত্ন নিলেই নয় ভেতর থেকেও সঠিক পুষ্টি
গ্রহণ করাটাও জরুরী। আপনি কি খাচ্ছেন তা শুধু শরীর নয় ত্বকেরও প্রতিচ্ছবি।
তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন ব্রণ প্রতিরোধকারী খাবার, আর কয়েক
সপ্তাহের মধ্য আপনি নিজেই পরিবর্তন অনুভব করবেন।
বরফ থেরাপির মাধ্যমে ব্রণের ফোলা ভাব কমান
আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ব্রণ উঠার পরে ব্রণের ফোলা ভাব নিয়ে
অতিরিক্ত বিডম্বণায় থাকেন। অনেকেই আছেন যাদের ব্রণ উঠে লালচে দাগ হয়ে
থাকে, তখন সেটি শুধু দেখতেই খারাপ লাগে না বরং অসস্তিও তৈরি করে। এই ধরনের
ব্রণের ফোলা ভাব ও ব্যথা কমাতে বরফ থেরাপি একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হতে পারে।
বরফ প্রাকৃতিকভাবে রক্তনালীকে সংকুচিত করে যার ফলে প্রদাহ কমে এবং ত্বকের জালা
ভাব দূর হয়। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে একটি পাতলা চাদরে জড়িয়ে দুই থেকে তিন
মিনিট আক্রান্ত স্থানে ধরে রাখলে প্রদাহ কমে এবং দ্রুত উপকার পাওয়া
যায়।
বরফ থেরাপি দিনে দুইবার সকাল ও রাত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সরাসরি বরফ
কখনই তাকে লাগাবেন না, এতে ত্বক আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে
ব্রণের ফোলা ভাব, লালচে ভাব ও ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। এটি কোন রাসায়নিক নয়,
বরং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন। তাই দ্রুত আর সহ
সমাধানের জন্য বরফ থেরাপি হতে পারে আপনার ত্বকের প্রথম
সারির বন্ধু।
রাতে ঘুমানোর আগে কি করলে ব্রণ উঠে না
রাত্রে ঘুমানোর আগে যদি আপনি কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন, তবে তাকে ব্রণের
সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। কারণ রাতে সময়টিকে ত্বক নিজের কে রিপেয়ার
করে এবং ঠিক এই সময়টাতেই যদি সঠিক যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে ব্রণের সৃষ্টি রোধ
করা সম্ভব হয়। নিচে রাতে ঘুমানোর আগে অনুসরণযোগ্য কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা
দেওয়া হলোঃ
- রাত্রে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে নেই কেননা সারাদিনের ধুলাবালি, মেকআপ ও তেল ত্বকে জমে ব্রণের কারণ হতে পারে।
- রাত্রে ঘুমানোর আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন কেননা ত্বক হাইড্রেট থাকলে তেল-গ্রান্থি অতিরিক্ত তেল তৈরি করেনা ফলে ব্রণের ঝুঁকি কমে।
- তেলমুক্ত ও নন-কমিডোজেনিক মশ্চারাইজার বেছে নিন।
- নিয়মিত বালিশের কভার পরিষ্কার রাখুন, বালিশের কভার নিয়মিত না পরিস্কার করলে সেখানে জমে থাকা তেল ও ব্যাকটেরিয়া ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রণের সৃষ্টি হয়।
- চুল খোলা রেখে ঘুমাবেন না কেননা চুলে থাকা তেল ও ধুলা ময়লা ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- রাতে ঘুমানোর আগে চিনি জাতীয় এবং ফাস্টফুট জাতীয় খাবার এড়িয়ে জরুরি
- নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমান।
রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া শুধু রূপচর্চা নয়, এটা আপনার ত্বককে
সুস্থ রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। প্রতিদিন যদি আপনি নিয়ম মেনে ত্বকের
পরিচর্যা করেন তাহলে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। তাই এখন থেকেই গড়ে
তুলুন একটি স্বাস্থ্যকর রাত্রি কালিন অভ্যাস যা আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করবে।
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্রণ হলে কি করনীয়
মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড চক্রের সময় শরীরে হরমোনের বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়।
বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেক্টেরনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে
সেবাম (ত্বকের তেল) উৎপাদন বেড়ে যায় এবং পোরস বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্রোন দেখা
দেয়। এ ধরনের ব্রণ কে হরমোনাল ব্রণ বলা হয়। এটি সাধারণত, চোয়াল বা গালের
নিচের অংশে বেশি দেখা যায় এবং অনেক সময় ব্যথা যুক্ত হয়।
এমন সময় ত্বকের যত্নে প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা ও ধৈর্য। নিচে দেওয়া হল কি
করবেন আর কি এড়িয়ে চলবেনঃ
- দিনে দুইবার হালকা ও অয়েল ফ্রি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- ঘাম বা তেল জমলে নরম টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- তেলমুক্ত ও আন্টি এক মেয়ে ফর্মুলা যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন।
- ব্যথার জায়গায় এলোভেরা জেল লাগালে ব্যথা কমে।
- বরফ দিয়ে হালকা চেপে ধরলে প্রদাহ কমে।
- বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
- শাক-সবজি ভিটামিন সি ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খান।
- মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন কেননা মানসিক চাপ ব্রণ বাড়াতে পারে।
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্রণ হওয়া খুবই সাধারণ, কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণে
রাখা সম্ভব যদি আপনি ত্বকের যত্নে একটু বাড়তি মনোযোগ দেন। প্রাকৃতিক উপায়,
স্বাস্থ্যকর খাবার এবং হালকা পরিচর্যার মাধ্যমে হরম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে অবশ্যই ডার্মালজিস্ট ডাক্তারের পরামর্শ
নেওয়া উচিত।
শেষ কথাঃ ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস
ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস যদি নিয়মিত ও সঠিকভাবে অনুকরণ করা
যায়, তাহলে খুব সহজেই তোকে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব। ঘরোয়া উপাদান যেমনঃ
লেবু, মধু, তুলসীপাতা, এলোভেরার জেল, বরফ, গোলাপ জল, কিংবা
বেসন সবকিছুই সহজ লব্ধ এবং ত্বকের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও করেনা। প্রতিটি
উপায় প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও তার হালকা
করে। তবে শুধু ঘরোয়া টিপস ই নয়, এর পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম জরুরী।
আশা করি ব্রণ দূর করার ৭টি সহজ ঘরোয়া ম্যাজিক টিপস আপনার ত্বকের যত্নে
সহায়ক হবে।সুস্থ, উজ্জ্বল পেতে নিজের প্রতি যত্নবান
হন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন রূপচর্চা বিষয়ক পরামর্শ নিয়ে। ততদিন
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;
comment url