বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ - প্রকৃতির জন্য করুন কিছু ভালো কাজ
প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা শুনি প্রকৃতিকে ভালো রাখার আহ্বান, কিন্তু আপনি কি সত্যিই কিছু করছেন? এই লেখায় আমরা দেখেছি কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় যেগুলো আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন প্রকৃতির উপকারে। গাছ লাগানো, প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ এই ছোট কাজগুলো একসাথে করে গড়ে তুলতে পারি একটি সবুজ ও সুস্থ্য পৃথিবী।
আপনি যদি সত্যিই পরিবেশকে ভালোবাসেন এবং জানতে চান কিভাবে পরিবেশকে সুন্দর রাখা যায়। তাহলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য। এই পোস্টটি মাধ্যমে আমরা সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে পরিবেশ রক্ষায় আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি। তাহলে, চলুন দেরি না করে পরিবেশ রক্ষার যাত্রায় একসাথে হই।
পেজ সুচিপত্রঃ বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫
বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রথম পালিত হয় কবে
২০২৫ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হবে ৫'ই জুন বৃহস্পতিবার। বিশ্ব পরিবেশ
দিবস প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ সালের ৫ জুন এবং সেই সময় থেকে এটি প্রতিবছর পালন করা
হচ্ছে। এই দিনটি নির্ধারণ করা হয় জাতিসংঘের উদ্যোগে, ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত
'স্টকহোম কনফারেন্স অন দা হিউম্যান এনভারমেন্ট' এই সম্মেলনে। এই সম্মেলনে পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন, এবং
সিদ্ধান্ত নেন একটি নির্দিষ্ট দিনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
১৯৭৪ সালে প্রথম বার যখন দিবসটি পালিত হয় তখন এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল "Only One
Earth" অর্থাৎ "একটাই পৃথিবী" সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দিবসটি শুধুমাত্র একটি
আলোচিত একতাই রয়ে যায়নি বরং এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আজ
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ এই দিবসে অংশ নেয় সচেতন হয় এবং পরিবেশ রক্ষায়
নিজের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস কেন পালন করা হয়
বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় মূলত মানুষের মাঝে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা
বৃদ্ধি ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার জন্য। দিন দিন আমাদের পরিবেশ
দূষণ বনভূমি ধ্বংস গ্লোবাল ওয়ার্মিং, প্রাণীর বিলুপ্তি সহ নানা সমস্যার মুখোমুখি
হচ্ছে এসব সমস্যা শুধু প্রাকৃতিক না আমাদের জীবন যাপনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
তাই বিশ্ববাসীকে একত্র করে পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানানোর জন্য এই জীবনটির মূল
উদ্দেশ্য।
আরো পড়ুনঃ কোটি টাকা আয় করার সেরা ১৪ টি উপায় ২০২৫
এই দিবসে মানুষকে উৎসাহিত করা হয় গাছ লাগাতে প্লাস্টিক কম ব্যবহার করতে এবং পানি
ও বিদ্যুৎ অপচয় না করতে স্কুল কলেজ অফিস ও বিভিন্ন সংস্থা নানা ধরনের সচেতনামূলক
অনুষ্ঠান আয়োজন করে। পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয় আমাদের প্রত্যকের
ব্যক্তিগত দায়িত্ব। আমরা যদি সবাই একই সাথে পরিবেশ বান্ধব জীবন যাপন শুরু করি
তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারবো। বিশ্ব পরিবেশ
দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির উপর আমরা কতটা নির্ভরশীল এবং প্রকৃতির
ক্ষতি হলে আমার দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাই এই দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়
প্রকৃতির জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন আজ থেকেই।
২০২৫ সালের পরিবেশ দিবসের স্লোগান কি
২০২৫ সালে 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' আয়োজক দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া দায়িত্ব পালন
করছে। তাদের উদ্যোগে প্লাস্টিক দূষণ রোধে নানার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে যা
বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় হতে পারে। ২০২৫ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল
প্রতিপাদ্য বিষয় হল "প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি" এই স্লোগানটি আমাদের
মনে করিয়ে দেয় প্লাস্টিক দূষণ এখন একটি ভয়াবহ বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর সমাধান
আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক হলেও, এর
অপব্যবহারের কারণে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক
পণ্য নদী সাগর ও মাটিতে জমে থাকে যা জৈবিক এবং জীববৈচিত্র ধ্বংস করছে এবং আমাদের
খাদ্যচক্রেও প্রবেশ করেছে। এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞা করি আমরা
সচেষ্ট ভাবে প্লাস্টিক দূষণ রোধে চেষ্টা করব এবং পরিবেশবান্ধব জীবন যাপন করব একই
সাথে কাজ করলে আমরা একটি সুন্দর ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো।
পরিবেশ দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে পরিবেশ দূষণ আমাদের দেহের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে বায়ু দূষণের প্রভাব, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাতে সারা বছরই
বায়ুতে ধুলাবালি ও ক্ষতিকর করার পরিমাণ অতিরিক্ত থাকে যা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা,
হৃদরোগ সহ নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গবেষণায় বলছে শুধু বায়ু দূষণের
কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ প্রায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। গ্যাস চালিত
যানবাহনের অভাব অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ এই দূষণকে আরো বেশি মাত্রায়
বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পানি ও মাটির দূষণের মাত্রা দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। নদ-নদীতে,
কল-কারখানার বর্জ্য কোন প্রকার শোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে। যার ফলে নদী হয়ে পড়ছে
ভয়াবহভাবে দূষিত, আর এই দূষিত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিকাজে যার ফলে ফসলেও এই
বিষ ঢুকে পড়ছে একইভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। যার নিকট
ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তায় এক অন্যরকম হুমকি মুখে ফেলতে পারে। তাই ,এখনই উপযুক্ত
সময় আমাদের সম্মিলিতভাবে সচেতন ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ
সংরক্ষণে পরিবেশের দূষণের পরিমাণ কমাতে একত্রে কাজ করতে হবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে কিভাবে গাছ লাগানো যায়
ব্যক্তি পর্যায়ে গাছ লাগানো খুবই সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ যা পরিবেশ
রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মনে করেন গাছ
লাগাতে জায়গা বা বড় জমির দরকার পড়ে, বাস্তবে তা নয় গাছ লাগানোর ইচ্ছা থাকলে
বারান্দা বা ছোট টবে গাছ লাগানো যায় যে কেউ ইচ্ছা করলেই বাসা ছাদে বাড়ির
বারান্দায় উঠানের সামনে খোলা জায়গায় ফলজ এবং ঔষধি গাছ লাগাতে পারেন।
আজকাল গ্রামের শহরে নার্সারি গড়ে ওঠার ফলে গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই সহজ হয়ে
গেছে। নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। রোপনের পরে
চারা গাছে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখা, সময়মতো পানি দেওয়া, গাছের যত্ন নেওয়া,
সময়মতো সার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। পরিবারের ছোট সদস্যদেরও আমাদের এই গাছ লাগানোর
সাথে পরিচিত করে দেওয়া উচিত এতে তারা পরিবেশের সাথে বড় হওয়ার সুযোগ পাবে।
এভাবে একজন মানুষ চাইলেই নিজের বাসা থেকেই গাছ লাগানোর মাধ্যমে সবুজে ভরিয়ে দিতে
পারবে তার আশেপাশের পরিবেশ।পরিবেশকে সবুজে ভরিয়ে দিতে আরেকটি সহজপন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যেমন
সামাজিকভাবে গাছ লাগানোর অভ্যাস গড়ে তোলা। সামাজিকভাবে গাছ লাগানোর অভ্যাস গড়ে
তুলতে একটু কাজ করা যেতে পারে। যেমন কোন অনুষ্ঠানে অতিথি কে ফুলের তোড়া উপহার না
দিয়ে একটি গাছের চারা উপহার দেওয়া যেতে পারে। গ্রামের বা শহরের স্কুল এর মাঠের
আশেপাশের ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানো যেতে পারে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ বা
মন্দির কেন্দ্র করে গাছ লাগানো যেতে পারে।
আবার ইচ্ছা করলে অফিসে, দোকানে বা খোলা জায়গায় ফুল বা ফলের গাছ লাগিয়ে রাখা
যায় এতে শুধু সৌন্দর্যই নয় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেক ভূমিকা রাখে।
আমাদের মনে রাখতে হবে একজন মানুষ বছরেও যদি পাঁচটি গাছও লাগান এবং সেগুলোর
যত্ন নিন তাহলে হাজারো মানুষ মিলে গোটা দেশেই সবুজের বিপ্লব ঘটাতে পারে এতে করে
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ রেখে যেতে পারবো। তাই আমাদের
এখনই ব্যক্তি পর্যায়ে গাছ লাগানোর অভ্যাস শুরু করা দরকার।
শেষ কথাঃ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রকৃতির জন্য করুন কিছু ভালো কাজ
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ আমাদের খুব ভালো করেই দেখিয়ে দিচ্ছে আজ প্রকৃতি কতটা
বিপন্ন। পরিবেশ দূষণ জলবায়ু পরিবর্তন আর বন উজাড় কতটা ভয়াবহ রকমের সমস্যা
বাড়িয়ে দিচ্ছে দিন দিন এবং আমাদেরই তার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, এমন এই
নিষ্ঠুর বাস্তবতা দিনে শুধু অনুষ্ঠান বা স্লোগান দিয়েই শেষ নয় দরকার বাস্তব
কাজের।
আসুন আমরা সকলে মিলে ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি প্রতিজ্ঞা করি, যেন
আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপ এর মাধ্যমেও আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি। গাছ
লাগানো পানির অপচয় রোধ করা প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার কমানো এবং পরিমিত সম্পদের
ব্যবহার এই প্রতিটি কাজই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সুস্থ
পৃথিবী নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে একটি সবুজ ও সুস্থ একটি পৃথিবী গড়ে
তুলতে মনে রাখবেন আমাদের একটাই পৃথিবী আর এর যত্ন নেওয়া আমাদের সকলেরই দায়িত্ব
ও কর্তব্য।
অল অভার বিডি ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;
comment url